earthquake history in bangla লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
earthquake history in bangla লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৮

ইতিহাসে ভয়াবহ ভূমিকম্প

ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
এলিপ্পো,সিরিয়া

ইতিহাসের সবচেয়ে প্রলয়ংকারী ভুমিকম্পের মধ্যে এটি তৃতীয়। সিরিয়ার উত্তরে অবস্থিত এলিপ্পো শহরে ১১ অক্টোবর ১১৩৮ তারিখে এই ভূমিকম্প অনুভুত হয়। রিক্টারস্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮.৫ এবং শক্তিমাত্রা ছিল ২.৮ গিগাটন। ভুমিকম্পের প্রবল আঘাতে হারেম শহরের একটি গির্জা ধসে ৬০০ জন রক্ষী প্রাণ হারায়। মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ২,৩০০০। বেশকয়েকটি শহর সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং পরে সেই ধ্বংস‘পের উপর পুনরায় নির্মিত হয় নতুন বেশ কিছু শহর।

নানকাইডো,জাপান

১৪৯৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মাসে জাপানের নানকিয়া সমুদ্র উপকূলে ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের ফলে উৎপন্ন হয় প্রয়ংকারী সূনামী। সূনামীর তান্ডবে মারা যায় ২৬,০০০ থেকে ৩১,০০০ অধিবাসী। সুনামীর ফলে উৎপন্ন কম্পন বসো পেনিনসূলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং সুরুগা বে-তে আরেকটি সূনামী উৎপন্ন হয়। এই সূনামীর ফলে কটুকু-ইন প্রদেশে স্থাপিত বুদ্ধের বিশাল মূর্তি সহ মন্দির ধব্বংসপ্রাপ্ত হয়।

শান্জি,চীন

চীনের শান্জি প্রদেশে যে ভূমিকম্পটি অনুভুত হয়,সেটিকে অনেকে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ভুমিকম্প হিসাবে আখ্যায়িত করেন। ১৫৫৬ সালের ২৩ জানুয়ারী তারিখে এই ভুমিকম্পে শান্জি প্রদেশের প্রায় ৫২০ মাইল এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তুুপে পরিণত হয়। এই ভুমিকম্পটি ৯৭ টি দেশেও অনুভুত হয়। এই ভুমিকম্পের ফলে ২০ মিটার গভীর ফাটল এবং ব্যাপক ভূমিধ্বস সৃষ্টি হয় । অগণিত স্থাপনা মুর্হুতে ভেঙে পড়ে। নিহত হয় আট লক্ষ ত্রিশ হাজারেরও বেশী অধিবাসী,যা তৎকালীন সময়ে সানইজ প্রদেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগেরও অধিক। রিক্টার স্কেলে এই ভুমিকম্পের মাত্রা ছিল মাত্র ৮.০ এবং শক্তিমাত্রা ছিল মাত্র ১ গিগাটন।

সিমাখা,আজারবাইজান

১৬৬৭ সালের নভেম্বরে আজারবাইজানে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনূভূত হয়। এই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল সমাকজি শহরের কাছে এবং ফোকাসের গভীরতা ছিল ১২ কি.মি। ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল মার্ক্কালি স্কেলে দশ এবং মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ৮০,০০০ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমান দাড়ায় ২৫ মিলিয়ন ডলার।

সিসিলি,ইতালী

ইতালীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রয়ংকারী ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয় ১৬৯৩ সালের ১১ জানুয়ারী। রিক্টারস্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৪ এবং তীব্রতা ছিল মাক্কালি স্কেলে ১১ । ভূমিকম্পটি মূলত আঘাত হানে ইতালীর সিসিলী,কালাব্রিয়া এবং মাট্টা এলাকায়।এই ভূমিকম্পে অন্তত:পক্ষে ৭০ টি শহর ধব্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ৬০,০০০। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামী আঘাত হানে লানিয়ান সাগর এবং স্টেইট অব মেসিনা (সিসিলির পূর্ব প্রান্ত এবং ক্যালাব্রিয়ার পশ্চিম প্রান্তের সরু সংযোগস্থান) এবং ক্যাটানিয়া প্রদেশের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ হারিয়ে যায় চিরতরে।

তাবরিজ,ইরান

১৭২১ সালের ২৬ এপ্রিল তারিখে ইরানের তাবরিজ শহরের নিকটে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। এই ভূমিকম্পে বেশ কিছু বিখ্যাত মসজিদ এবং মাদ্রাসা ধব্বংসপ্রাপ্ত হয়। মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ৮,০০০ থেকে ২,৫০,০০০ জন। অনেকে অবশ্য ধারনা করেন মৃতের সংখ্যা হবে মাত্র ৮০,০০০ । এই ভূমিকম্পকে সেই সময় আল্লাহ তালার গজব হিসাবে গণ্য করা হয়।

লিজবন,পর্তুগাল

এই ভূমিকম্প ‘গ্রেট লিসবন ভূমিকম্প’ নামেও পরিচিত। ১৭৫৫ সালের ১ নভেম্বর লিসবন রাজ্যে এই ভূমিকম্প অনূভূত হয়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল মোমেন্ট ম্যাগনোটিউট স্কেলে ৮.৫ থেকে ৯.০ এর মধ্যে। ভূমিকম্পের সাথে যুক্ত হয় আগুন ও সুনামী। এই ভূমিকম্পে লিসবন ও আশেপাশের এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় । মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ১০,০০০ থেকে ১০০,০০০ পর্যন্ত।

ম্যাসিনা, ইতালী

১৯০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর দক্ষিণ ইতালীর প্রাদেশিক শহর সিসিলী এবং কালাব্রিয়াতে ৭.১ মাত্রার ভুমিকম্প অনুভুত হয়। ভুমকম্পের কেন্দ্র ছিল সিসিলী প্রদেশের ম্যাসিনা শহরে। রিগিও,ইতালীর মুল অঞ্চলে র‌্যাগীয় শহর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কবলে পড়ে। এই ভুমিকম্পের স্থায়িত্ব ছিল ৩০ থেকে ৪০ সে.। ভুমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামীর জলোচ্ছাসে (৩৯ ফুট) উপকুলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়। এই সুনামীর ফলে ম্যাসিনা এলাকায় ধবংসযজ্ঞ আরো ব্যাপক হয়-শতকরা নব্বই ভাগ স্থাপনা ধসে পড়ে এবং ৭০,০০০ অধিবাসী নিহত হয়।

হাইয়িউয়েন, চীন

চীনের নিংযিয়া প্রদেশের হাইয়িউয়েন অঞ্চলে ১৯২০ সালের ১৬ ডিসেম্বও যে প্রবল ভুমিকম্প অনুভুত হয় সেটির মাত্রা ছিল রিক্টার স্কেলে ৭.৮ । এই ভুমিকম্পকে ১৯২০ গাংসু ভুমিকম্পও বলা হয়ে থাকে। হাইয়িউয়েন প্রদেশে নিহতের সংখ্যা ছিল ৭৩,০০০-এর অধিক। গাইওয়েন প্রদেশে মারা যায় ৩০,০০০ অধিবাসী। লংদি ও হুইং শহরের সকল বাড়ী ভেঙে পড়ে বুমিকম্পের প্রবল ঝাঁকুনীতে। প্রায় ২০০ কি.মি দীর্ঘ ফাটল সৃষ্টি হয় এই ভূমিকম্পের ফলে  এবং চীনের বেশীরভাগ এলাকায় এই ভুমিকম্প অনুভুত হয়।

কানতো, জাপান

১৯২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর। বেলা ১১ টা ৫৮ মিনিট। জাপানের রাজধানী টোকিও এবং ওয়াকাহমার জীবনযাত্রা হঠাৎই স্তব্দ হয়ে পড়ে ৮.২ মাত্রার ভুমিকম্পের কারনে। ভুমিকম্পের কারণ ফিলিপাইন  সি-প্লেটের অংশবিশেষ কানতো প্লেটের মাঝে ঢুকে পড়ে। সাগরপৃষ্টে ৪০ ফুট সুনামীর সৃষ্টি হয়। সুউচ্চ ঢেউ মুর্হুতে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সহস্রাধিক অধিবাসীকে।ওয়াকাহমা ও টোকিওর কাঠের বাড়িগুলো আগুনে জ্বলতে থাকে। আগুনের লেলিহান শিখা মুহুর্তে গ্রাস করে ঘর-বাড়ী, মানুষ-সবকিছু।  মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ১,৪০,০০০। ভূমিকম্পেরউপকেন্দ্র বা এপিসেন্টার ছিল ওসিমা দ্বীপের নিকটবর্তী সাগামী বে (টোকিও শহরের ৫০ মাইল দক্ষিণ-পূর্ব অংশে। ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ৫ মিনিটের মতো। ওয়াকাহামা শহরের প্রায় আশি শতাংশ এবং টোকিও শহরের ষাট শতাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তুুপে পরিণত হয় । ইমপেরিয়াল ইউনিভাসিটির পাঠাগারের পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীণ ও দুষ্প্রাপ্য বই ও শিল্পবস্ত আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যায়। বিখ্যাত ইমপ্যারিয়াল হোটেল মাটির গভীরে দুইফুটের মতো গেঁথে যায়। ৯০০০ কারখানা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। অর্থনীতিতে দেখা দেয় বিপর্যয় । বেকার হয়ে পড়ে অগনিত মানুষ।

আসগাবাট, সোভিয়েত ইউনিয়ন

১৯৪৮ সালের ৬ অক্টোবর সকালে, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এর আসগাবাট প্রদেশের  নিকটে ৭.২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভুত হয়। ভূমিকম্পের এপিসেন্টার ছিল আসগাবাট প্রদেশের ২৫ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে। এই ভূমিকম্পের ফলে ইট নির্মিত দালান-কোঠা মুর্হুতে ভেঙে পড়ে এবং কনক্রিট নির্মিত স্থাপনাসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রাণহানী এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কি ছিল সে বিষয়ে মিডিয়াতে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ব্যাপক গোপনীয়তার জন্য অনেকে ধারনা করেছিলেন যে, এই ভুমিকম্প ছিল আসলে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম আনবিক বোমার শক্তি পরীক্ষা। ১৯৮৮ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক রিপোর্টে  নিহতের সংখ্যা দেখানো হয় সর্বমোট ১১০,০০০ জন।

ভ্যালভিডিযা,চিলি

১৯৬০ সালে ২২ মে তারিখে সন্ধ্যায় চিলির ভ্যালভিডিযাতে যে ভূমিকম্পনটি  অনুভুতহয় তার মাত্রা ছিল রিক্টার স্কেলে ৯.৪ থেকে ৯.৬। এই ভুমিকম্পের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ছিল ১৭৮ গিগাটন। ১০০০ টি আনবিক বোমা একই সময়ে বিস্ফোরিত হলে যে পরিমান শক্তি নির্গত হবে,এই ভূমিকম্পটি ছিল সেইরকম শক্তিশালী। ভুমিকম্পনটির স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ১০ মিনিট। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল লুমাকো,সান্তিয়াগোর(চিলির রাজধানী)৩৫০ মাইল দক্ষিণে। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামী আঘাত হানে চিলির উপকুলীয় এলাকায়।২৫ মিটার(৮২ ফুট)জলোজ্জাসে প্লাবিত হয় চিলির উপকুলীয় এলাকাসমূহ। এই ভূমিকম্প অনুভুত হয় ৪৩৫ মাইল দুরত্বে অবস্থিত হাওয়াই পর্যন্ত। কিন্তুু আশ্চর্য বিষয় এই যে, এই ভুমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০০০ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ছিল এখনকার হিসাব মতে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী । 

উনগে,পেরু

১৯৭০ সালের ৩১ মে যে প্রয়ংকারী ভূমিকম্পটি পেরুতে অনূভূত হয় সেটির উৎপত্তি ছিল সাগরপৃষ্ঠে । পেরুর এনক্যাশ এবং লা লিবারটেড অঞ্চলে এই ভূমিকম্প প্রবলভাবে অনুভূত হয় এবং প্রায় ৩ মিলিয়ন লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রিক্টার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.০,তীব্রতা ছিল মার্ক্কালি স্কেলে ৮। ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব ছিল ৪৫ সেকেন্ড।

ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
এই ভূমিকম্পে হুয়েসক্যারেন পর্বতের উত্তরাংশে ব্যাপক পাথর ও তুষারধস হয় এবং উনগে এবং র‌্যানরাহিকা এলাকার বেশীরভাগ শহর পাথর ও তুষারের নীচে চাপা পড়ে। এই উনগে এলাকাতেই মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ২০,০০০। এই প্রয়ংকারী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দাড়ায় মোট ৭৪,১৯৪ এবং আহতের সংখ্যা দাড়ায় ১৪৩,৩৩১ জন। নিঁখোজ হয় ২৫,৬০০ জন,গৃহহারা হয় ১০ লক্ষরও বেশী অধিবাসী। আর্থিক ক্ষতির পরিমান অর্ধ-বিলিয়ন ডলারেও বেশী। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও মানুষের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে পড়ে।

ত্যাংশান, চীন

১৯৭৬ সালের ২৭ জুলাই চীনের হিবি প্রদেশের ত্যাংশান অঞ্চলে যে ভয়াবহ ভুমিকম্প আঘাত হানে সেটি ছিল এতই প্রয়ংকারী যে,বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রলয়ংকারী ভুমিকম্প(মৃত্যের সংখ্যার আধিক্যের কারণে) হিসাবে গণ্য করা হয়। সকালের দিকে এই ভুমিকম্পের শুরু হয় এবং প্রায় ১৪ থেকে ১৬ সেকেন্ড স্থায়ী হয় । চীন সরকারের মুখপাত্রের ভাষ্যমতে এই ভুমিকম্পের মাত্রা ছিল রিক্টার স্কেলে ৭.৮কিন্তুু অন্যান্য সুত্রমতে এই ভুমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.২।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                        
চীন সরকারের ভাষ্যমতে এই ভুমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৬,৫৫,০০০ এবং আহতের সংখ্যা ১,৬৫০০০।  ২৫ মাইল দীর্ঘ ত্যাংশান ফল্ট বরাবর আমুরিয়ান প্লেটের সাথে ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষের ফলে এই ভুমিকম্পের উৎপত্তি হয়।

রুদবার,ইরান

১৯৯০ সালের ২১ জুন ইরানের উত্তরাঞ্চলে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিক্টারস্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৪ এবং তীব্রতা ছিল মাক্কালি স্কেলে ১০। তেহরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় বিশেষ করে, রুদবার এবং মঞ্জিল এলাকার শহরগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ৮ বিলিয়ন ডলারেও বেশী। মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ৩৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ এবং আহতের সংখ্যা দাড়ায় ৬০,০০০ থেকে ১০৫,০০০।

ইজমিত,তুরস্ক

১৯৯০ সালের ১৭ আগষ্ট তুরস্কেও উত্তরাঞ্চলে রিক্টারস্কেলে ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্প মাত্র ৩.৭ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। ইজমিত শহরটি মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ১৭,১২৭ জন এবং আহত হয় ৪৩,৯৫৯ জন। অন্য আরেকটি সূত্রমতে, নিহত ও আহতের সংখ্যা ৪৫,০০০-এর কাছাকাছি। ১৯৯৯ সালের স্পেটেম্বর-এর আরেকটি রির্পোটে বলা হয় ১,২০,০০০ টি দুর্বল কাঠামোয় নির্মিত বাড়ি ধব্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং ৫০,০০০-এর মতো বাড়ি মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০০০ টি বহুতল দালান ধসে পড়ে এবং ৪০০০-এর মতো বহুতল দালান সম্পূর্ণভাবে ধব্বংসপ্রাপ্ত হয়। গৃহহীন হয়ে পড়ে ৩ লক্ষেরও অধিক অধিবাসী।


ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া

২০০৪ সাল। ২৬ ডিসেম্বর। ভোরে ভারত মহাসাগরের সুমাত্রা দ্বীপ প্রচন্ড জোরে কেঁপে উঠে ভুমিকম্পের প্রবল ঝাঁকুনিতে। প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী এই প্রবল ভুমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সুমাত্রার পশ্চিম উপকুল। মাত্রা ছিল রিক্টার স্কেলে ৯.১ থেকে ৯.৩ এবং শক্তিমাত্রা ছিল ৩২ গিগাটন যা হিরোসিমায় ফেলা ১৫০০ টি আনবিক বোমার সমান। এই ভুমিকম্পের কারণ ছিল ভারতীয় পেল্টের সাথে বার্মিজ পেল্টের সংর্ঘষ।  দুই প্লেটের সংঘর্ষের ফলে সাগরপৃ®ঠ কয়েক মিটার উপরে উঠে আসে এবং সাগরে পানির ব্যাপক আলোড়নের ফলে সুনামীর সৃষ্টি হয়। এই সুনামী প্রভাবে  প্রবল জলোচ্ছাস (৩০ মিটার/ ১০০ ফুট) ডুবে যায় ভারত মহাসাগরের অবস্থত  ১৪ টি দেশের উপকুলবতী অঞ্চল। মারা যায় এই ১৪টি দেশের প্রায় ২,৩০,০০০ অধিবাসী। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী। ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্বোগের মধ্যে এটি একটি।এই ভুমিকম্প সবচেয়ে বেশী অনুভুত হয় ইন্দোনেশিয়ায়, তারপরে শ্রীলংকায় এবং থাইল্যান্ডে। বাংলাদেশেও এই ভুমিকম্প অনুভুত হয় এবং ২ জন নিহত হয়।

কাশ্মীর,পাকিস্তান

২০০৫ সালের ৮ অক্টোবর। পাকিস্তানের কাশ্মীরে রিক্টারস্কেলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই প্রবল ভূমিকম্পে প্রাণ হারায় ৮৫,০০০ জন এবং আহত হয় ৬৯,০০০ জন। জাম্মু এবং পার্শবর্তী দেশেগুলোতে মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ১৪,০০০। তাজাকিস্তান ও পশ্চিম চীনেও ভূ-কম্পন অনূভূত হয়।

ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সিচুয়ান, চীন

সিচুয়ান ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় ২০০৮ সালের ৮ মে। রিক্টারস্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.০। এই ভূমিকম্প এতই প্রবল ছিল যে, পাশ^বর্তী দেশেও এই ভূমিকম্প অনূভূত হয়। বেইজিং ও সাংহাই শহওে দালান-কোঠা প্রবলভাবে কাঁপতে থাকে। সরকারী হিসাবমতে মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ৬৯,১৯৭ জন, যার মধ্যে সিচুয়ান প্রদেশেই মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৮,৬৩৬ জন। আহত হয় ৩৭৪,১৭৪ জন এবং নিখোঁজ হয় ১৮,২২২ জন। বলা হয়ে থাকে ১৯৭৬ সালে সংঘটিত তাংশ্যাণ ভূমিকম্পের পর এই ভূমিকম্পটি সবচেয়ে প্রানঘাতী। ৪.৮ মিলিয়ন থেকে ১৫ মিলিয়ন অধিবাসী গৃহহারা হয়। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পূর্ণনির্মাণ ও সংস্কার করতে চীন সরকারের খরচ ধরা হয়েছে ১ ট্রিলিয়ন ইয়েন বা ১৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার।

ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
পোর্ট-আও-প্রিন্স, হাইতি

২০১০ সালের ১২ জানুয়ারীতে হাইতির রাজধানী পোর্ট-আও-প্রিন্সে যে প্রলয়ংকারী ভুমিকম্প আঘাত হানে,সেটির মাত্রা ছিল রিক্টারস্কেলে ৭.০। ভুমিকম্পের কেন্দ্র(এপিসেন্টার) ছিল লিওগানি শহরের নিকটে-পোর্ট-আও-প্রিন্সের ২৫ কি.মি পশ্চিমে। এই ভুমিকম্পের পর ২৪ জানুয়ারী পর্যন্ত ৪.৫-এর অধিক মাত্রার ২৫ টি ছোট মাত্রার ভুমিকম্প (আফ্টার শক্) রেক্ড করা হয়। আনুমানিক ৩০ লক্ষ মানুষ এই র্দুযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ১০০,০০০ থেকে ১৬০,০০০ পর্যন্ত।আহতের সংখ্যা দাড়ায় প্রায় তিন লক্ষ এবং এক লক্ষ অধিবাসী গৃহহীন হয়ে পড়ে।এই ভমিকম্পে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইতির রাজধানী পোর্ট-আও-প্রিন্স ও জ্যাকমি শহর। প্রেসিডেন্ট ভবন,ন্যাশনাল এসেম্বলী ও পোর্ট-আও-প্রিন্স-এর প্রধান গির্জা,কারাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তোহকু, জাপান

মার্চ ১১, ২০১১। জাপানের তোহকু প্রদেশের পূর্ব উপকুলীয় এলাকায় আঘাত হানে ৯.০৩ মাত্রার বিধ্বংসী ভুমিকম্প। জাপানের ইতিহাসে এই ভুমিকম্প ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ইতিহাসের ভয়াবহ পাঁচটি ভুমিকম্পের একটি। মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ১৫,৮৭৮ এবং আহত হয় ৬,১২৬ জন। ২,১৭৩ জন নিখোঁজ হয়। ১,২৯,২২৫ টি বিল্ডিং ধসে পড়ে। ভুমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামীতে রাস্তা,হাইওয়ে, রেলপথ,সেতু এবং সুউচ্চ ইমারতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। সুনামীর প্রভাবে অনেক এলাকায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। বলা হয়ে থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানকে এত বেশী বিপর্যয়ে পড়তে হয়নি। এই ভুমিকম্প শুধু জাপানে মানবিক বির্পযয় এনে দেয়নি, ধ্বংস করে দিয়েছিল জাপানের চারটি প্রধান আনবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সুদুর কানাডা এবং হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে সুনামীসৃষ্ট ধ্বংসাবশেষ উড়ে এসেছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৫.৪ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সাহায্য আসে।

নেপাল ভূমিকম্প (কাঠমনডু ও পোখ্রার মধ্যবর্তী অঞ্চল)

এই ভূমিকম্প গোর্খা ভূমিকম্প নামেও পরিচিত। এই প্রয়ংকারী ভূমিকম্পে প্রায় ৯,০০০ লোকের প্রাণহানী ঘটে এবং আহত হয় প্রায় ২২,০০০। ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল শনিবার বেলা ১১ টা ৫৬ মিনিটে (নেপাল স্ট্যার্ন্ডাড টাইম)এই প্রলয়ংকারী ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়।এই ভূমিকম্পের ম্যাগনিটিউট বা মাত্রা ছিল ৭.৮(ইউনাইটেড স্টেট জিওলজিক্যাল সার্ভে) বা ৮.১ ( চায়না আর্থকোয়েক নেটওয়ারক্স সেন্টার) । ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল সংশোধিত মার্ক্কালি স্কেলে ৯ । ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল গোর্খা জেলার পূর্বে বারপাকে এবং কেন্দ্রেও গভীরতা ছিল আনুমানিক ৮.২ কি.মি (৫.১ মাইল)। ১৯৩৪ সালে সংঘটিত নেপাল-বিহার ভূমিকম্পের পর এটিই ছিল নেপালে সবচেয়ে প্রলয়ংকারী ভূমিকম্প।

ভূমিকম্পের ফলে মাউন্ট এভারেস্টে তুষার ধসে ২১ জনের প্রাণহানী ঘটে।  আরেকটি বিশাল ধস নামে ল্যাংট্যাং উপত্যকায়, এখানে ২৫০ জনের মতো মানুষ নিখোজ হওয়ার রির্পোট পাওয়া গেছে। শত শত মানুষ গৃহহারা হয়। কাঠমুন্ডুতে শতাব্দী-প্রাচীন স্থাপনা ধব্বংসপ্রাপ্ত হয় যেমন,কাঠমনডুর দরবার স্কোয়ার,পাটান দরবার স্কোয়ার,ভক্তপুর দরবার স্কোয়ার,চাংগু নারায়ণ মন্দির,বুদ্ধনাথ স্তুপ এবং শম্ভুনাথ  স্তুপ।

২৬ এপ্রিল, ১৫ থেকে ২০ মিনিটের ব্যবধানে ক্রমাগত আফ্টারশক উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে একটি আফ্টারশকের মাত্রা ছিল ৬.৭।

সবচেয়ে বড় মাত্রার আফ্টারশকটির উৎপত্তি হয় ১২ মে, ২০১৫ ।

ছবি ও তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত